জান্নাতের আটটি দরজাই যাদেরকে আহ্বান করবে।
জান্নাতে প্রবেশের আটটি দরজাই যাদের আহ্বান করবে
জান্নাতের রয়েছে বিভিন্ন দরজা, মুমিনের আমল অনুযায়ী মুমিন সেই দরজাগুলো দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াত দ্বারাও বোঝা যায় যে জান্নাতের বহু দরজা রয়েছে। কেননা পবিত্র কোরআনের আয়াতগুলো জান্নাতের দরজার আলোচনায় ‘আবওয়াব’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যার অর্থ দরজাসমূহ। রাসুল (সা.)-এর হাদিসের মাধ্যমেও বোঝা যায় যে জান্নাতের কয়েকটি দরজা রয়েছে। তাঁর একটি হাদিসে তিনি এর সংখ্যাও বলে দিয়েছেন।
উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বলেন রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে আর বলে, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রাসুল’, তার জন্য বেহেশতের আটটি দরজাই খুলে দেওয়া হবে। সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা করে প্রবেশ করবে। (নাসায়ি, হাদিস : ১৪৮)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় দ্বিগুণ খরচ করবে তাকে জান্নাতের দরজা থেকে আহ্বান করা হবে- হে আল্লাহর বান্দা! ইহা কল্যাণকর।
উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বলেন রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে আর বলে, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রাসুল’, তার জন্য বেহেশতের আটটি দরজাই খুলে দেওয়া হবে। সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা করে প্রবেশ করবে। (নাসায়ি, হাদিস : ১৪৮)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় দ্বিগুণ খরচ করবে তাকে জান্নাতের দরজা থেকে আহ্বান করা হবে- হে আল্লাহর বান্দা! ইহা কল্যাণকর।
যে ব্যক্তি পূর্ণাঙ্গ মুসল্লি, তাকে নামাজের দরজা থেকে আহ্বান করা হবে। আর যে (ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রামকারী) মুজাহিদ, তাকে জিহাদের দরজা থেকে ডাকা হবে। আর যে (ব্যক্তি) রোজাদার তাকে রাইয়ান (নামক জান্নাতের) দরজা থেকে ডাকা হবে। আর যে (ব্যক্তি) দানবীর তাকে সদকার দরজা থেকে আহ্বান করা হবে।’
(এ ঘোষণা শুনে) হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘আমার বাবা-মা আপনার প্রতি উৎসর্গ হোক, হে আল্লাহর নবি! প্রত্যেককেই তার (জন্য নির্ধারিত) দরজা থেকে আহ্বান করা হবে। কিন্তু এমন কোনো ব্যক্তি আছে কি? যাকে সকল দরজা থেকে ডাকা হবে? তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘হ্যাঁ’, আর আমি আশাবাদি যে, তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত। (বুখারি ও মুসলিম)
যে ধরণের মানুষেরা জান্নাতে প্রবেশ করবে তার মধ্যে অন্যতম একটি দল হলো- যারা এই দুনিয়াতে বিভিন্ন ট্রাজেডি বা ভয়ানক দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছেন। আর তারা এতে ধৈৰ্য ধারণ করেছেন। এটা সম্ভব যে, শুধু ধৈর্য আপনাকে জান্নাতে প্রবেশকারীদের একেবারে প্রথম সারিতে নিয়ে আসবে এবং জান্নাতে প্রবেশের আটটি দরজার সবগুলো আপনার জন্য উন্মুক্ত হয়ে পড়বে।
জানেন তো ঐ দরজাগুলোর কোনোটা সালাতের, কোনোটা রোজার, কোনোটা বা জিহাদের ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু, এমন অনেক মানুষ থাকবে যাদের হয়তো ঐরকম উচ্চ লেভেলের সালাত, সিয়াম বা জিহাদ নেই। কিন্তু তাদের শুধু একটি জিনিস আছে। আর এই একটি জিনিস তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশকারীদের একেবারে সম্মুখভাগে নিয়ে আসবে। এরপর জান্নাতের সবগুলো দরজা তাদেরকে নাম ধরে প্রবেশ করার আহ্বান জানাবে।
সে জিনিসটি কী? আমরা একে বলতে পারি খুবই মারাত্মক লেভেলের ব্যথা, কষ্ট এবং যন্ত্রণা ভোগের সময় ধৈর্য ধারণ। এই ধারণাটি খুবই সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ছোট বাচ্চা মারা যাওয়ার হাদিসে। হাদীসটি হলো- "সন্তানেরা প্রাপ্ত বয়সে পৌঁছার পূর্বেই যে ব্যক্তি তিন সন্তান হারাবে আর এতে সে ধৈর্য ধারণ করবে। এমন ব্যক্তি শেষ বিচারের দিন দেখবে জান্নাতে প্রবেশের আটটি দরজার সবগুলো তার জন্য উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে এবং সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে।
এখানে একটু থামি। তিন সন্তান!! মানে কি? ইতিহাসের ঐ সময়কালে শিশু মৃত্যুর হার ছিল অত্যন্ত বেশি। আমরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি যে ঐ সময়টা পার হয়ে গেছে।
আমি এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত অনুসন্ধান চালিয়েছি। খুঁজে পেলাম, এক দল গবেষক মধ্য যুগের ইউরোপে তথা ১৪শ থেকে ১৬শ সালের ইউরোপে শিশু মৃত্যুর হার নিয়ে একটি জরিপ চালিয়েছেন। তারা উদঘাটন করেছেন যে, তখনকার ইউরোপে দুই বছর বয়সের পূর্বেই প্রতি চারজন শিশুর একজন মারা যেত। আর পনের বছর বয়সে পৌঁছার পূর্বেই প্রায় ৪০ শতাংশ শিশুর মৃত্যু ঘটতো।
চিন্তা করে দেখুন। এটা ছিল মধ্য যুগের ইউরোপ। পাঁচশ বছর পূর্বে। আর রাসূলুল্লাহ (স) এর সময়কালের আরবে এ সংখ্যা আরো বেশি হওয়ার কথা। আপনাদের দাদা-দাদীদের গল্প থেকেও আপনারা জেনে থাকবেন। আমার দাদীও আমাকে বলেছে, শিশু মৃত্যু তাদের সময়েও খুবই কমন একটা ব্যাপার ছিল। তো, তিন সন্তান হারানো সে সময় বিরল কোনো ঘটনা ছিল না।
শিশু মৃত্যুর হার এখন এক শতাংশেরও কম। আলহামদুলিল্লাহ। আমরা আল্লাহর প্রশংসা করছি। এটি আধুনিক বিজ্ঞানের অন্যতম বড় একটি অর্জন। যে দ্রুত গতিতে শিশু মৃত্যুর হার কমেছে এটা আধুনিক প্রযুক্তির অন্যতম বড় একটি অর্জন। সমগ্র পৃথিবী জুড়ে। আলহামদুলিল্লাহ।
তাই, শিশু মৃত্যু এখন খুবই বিরল ঘটনা। যদিও একশ দুইশ বছর আগেও এটা সাধারণ ঘটনা ছিল।
যারা সন্তান হারিয়েছেন কেবল তারা জানেন এটা কতটা কষ্টের! মানুষের অভিজ্ঞতায় এর চেয়ে কষ্টের কোনো বিষয় নেই। নিজের সন্তানকে কবর দেয়ার কষ্টের চেয়ে কঠিন কোনো কষ্ট নেই। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা আমাদেরকে এর থেকে রক্ষা করুন। আমরা এখান থেকে বলতে পারি, ইনশাআল্লাহ, একজন মারা গেলেও।
কারণ, ছোট বাচ্চা হারানোর কষ্টের চেয়ে বড় কোনো কষ্ট পৃথিবীতে আর নেই। আগের যুগে বাচ্চা মারা যাওয়ার হার ছিল অনেক বেশি। এ জন্য হাদিসে তিন সন্তানের কথা এসেছে। আমাদের সময়ে বাচ্চা মারা যাওয়ার হার অনেক কম। তাই, এক বাচ্চা মারা যাওয়ার কষ্টও নিদারুণ যন্ত্রণার।
আল্লাহ হলেন আর-রাহমান, আর-রহীম। হাদিসে বর্ণিত নাম্বারগুলো সে সময়কার পরিস্থিতির আলোকে উপস্থাপিত হয়েছে। এখান থেকে আমরা বলতে পারি, আমাদের সময়ে কোনো দম্পতি যদি এক সন্তানও হারান ইনশাআল্লাহু তায়ালা তার জন্যেও জান্নাতের আটটি দরজার সবগুলো উন্মুক্ত হয়ে পড়বে।
- ড. ইয়াসির কাদি
কোন মন্তব্য নেই