যে ভাবে হজরত দাউদ আঃ বাদশা নিযুক্ত হয়েছিলেন !
হজরত দাউদ আঃ ও তালুত এবং জালুত_এর ঘটনা
اَلَمْ تَرَ اِلَى الْمَلَاِ مِنْۢ بَنِیْۤ اِسْرَآءِیْلَ مِنْۢ بَعْدِ مُوْسٰى١ۘ اِذْ قَالُوْا لِنَبِیٍّ لَّهُمُ ابْعَثْ لَنَا مَلِكًا نُّقَاتِلْ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ١ؕ قَالَ هَلْ عَسَیْتُمْ
اِنْ كُتِبَ عَلَیْكُمُ الْقِتَالُ اَلَّا تُقَاتِلُوْا١ؕ قَالُوْا وَ مَا لَنَاۤ اَلَّا نُقَاتِلَ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ وَ قَدْ اُخْرِجْنَا مِنْ دِیَارِنَا وَ اَبْنَآئِنَا١ؕ فَلَمَّا كُتِبَ عَلَیْهِمُ الْقِتَالُ تَوَلَّوْا اِلَّا قَلِیْلًا مِّنْهُمْ١ؕ وَ اللّٰهُ عَلِیْمٌۢ بِالظّٰلِمِیْنَ
আবার তোমরা কি এ ব্যাপারেও চিন্তা করেছো, যা মূসার পরে বনী ইসরাঈলের সরদারদের সাথে ঘটেছিল? তারা নিজেদের নবীকে বলেছিলঃ আমাদের জন্য একজন বাদশাহ ঠিক করে দাও, যাতে আমরা আল্লাহর পথে লড়াই করতে পারি। নবী জিজ্ঞেস করলোঃ তোমাদের লড়াই করার হুকুম দেয়ার পর তোমরা লড়তে যাবে না, এমনটি হবে না তো? তারা বলতে লাগলোঃ এটা কেমন করে হতে পারে, আমরা আল্লাহর পথে লড়বো না, অথচ আমাদের বাড়ি-ঘর থেকে আমাদের বের করে দেয়া হয়েছে, আমাদের সন্তানদের আমাদের থেকে আলাদা করে দেয়া হয়েছে? কিন্তু যখন তাদের লড়াই করার হুকুম দেয়া হলো, তাদের স্বল্পসংখ্যক ছাড়া বাদবাকি সবাই পৃষ্ঠপ্রদর্শন করলো। আল্লাহ তাদের প্রত্যেকটি জালেমকে জানেন।
-:ব্যাখ্যা
এটি হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মের প্রায় এক হাজার বছর আগের ঘটনা। সে সময় আমালিকারা বনী ইসরাঈলদের ওপর চরম নির্যাতন চালাচ্ছিল। ইসরাঈলীদের কাছ থেকে তারা ফিলিস্তিনের অধিকাংশ এলাকা ছিনিয়ে নিয়েছিল। সামুয়েল নবী তখন ছিলেন বনী ইসলাঈলদের শাসক। কিন্তু তিনি বার্ধক্যে জর্জরিত হয়ে পড়েছিলেন। তাই ইসরাঈলী সরদাররা অন্য কোন ব্যক্তিকে নিজেদের নেতা বানিয়ে তার অধীনে যুদ্ধ করার প্রয়োজন অনুভব করছিল। কিন্তু তখন বনী ইসরাঈলদের মধ্যে অজ্ঞতা এত বেশী বিস্তার লাভ করেছিল এবং তারা অমুসলিম জাতিদের নিয়ম, আচার-আচরণে এত বেশী প্রভাবিত হয়ে পড়েছিল যে, খিলাফত ও রাজতন্ত্রের মধ্যকার পার্থক্যবোধ তাদের মন-মস্তিষ্ক থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। তাই তারা একজন খলীফা নির্বাচনের নয় বরং বাদশাহ নিযুক্তির আবেদন করেছিল। এ প্রসঙ্গে বাইবেলের প্রথম সামুয়েল গ্রন্থে নিম্নলিখিত বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ হয়েছেঃ“সামুয়েল সারা জীবন ইসরাঈলীদের মধ্যে সুবিচার করতে থাকেন। . ………………..তখন সব ইসরাঈলী নেতা একত্র হয়ে রামা’তে সামুয়েলের কাছে আসে। তারা তাঁকে বলতে থাকেঃ দেখো, তুমি বৃদ্ধ ও দুর্বল হয়ে পড়েছো এবং তোমার ছেলে তোমার পথে চলছে না। এখন তুমি কাউকে আমাদের বাদশাহ নিযুক্ত করে দাও, যে অন্য জাতিদের মতো আমাদের প্রতি সুবিচার করবে। ………..একথা সামুয়েলের খারাপ লাগে। তিনি সদাপ্রভুর কাছে দোয়া করেন। সদাপ্রভু সামুয়েলকে বলেনঃ এই লোকেরা তোমাকে যা কিছু বলছে, তুমি তা মেনে নাও কেননা তারা তোমার নয়, আমার অবমাননা করেছে এই বলে যে, আমি তাদের বাদশাহ থাকবো না.................সামুয়েল তাদেরকে---যারা তাঁর কাছে বাদশাহ নিযুক্তির দাবী নিয়ে আসেছিল---সদাপ্রভূর সমস্ত কথা শুনিয়ে দিলেন এবং বললেনঃ যে বাদশাহ তোমাদের ওপর রাজত্ব করবে তার নীতি এই হবে যে, সে তোমাদের পুত্রদের নিয়ে যাবে, তার রথ ও বাহিনীতে চাকর নিযুক্ত করবে এবং তারা তার রথের আগে আগে দৌঁড়াতে থাকবে। সে তাদেরকে সহস্র জনের ওপর সরদার ও পঞ্চাশ জনের ওপর জমাদার নিযুক্ত করবে এবং কাউকে কাউকে হালের সাথে জুতে দেবে, কাউকে দিয়ে ফসল কাটাবে এবং নিজের জন্য যুদ্ধাস্ত্র ও রথের সরঞ্জাম তৈরী করাবে। আর তোমাদের কন্যাদেরকে পাচিকা বানাবে। তোমাদের ভালো ভালো শস্যক্ষেত্র, আংগুর ক্ষেত ও জিতবৃক্ষের বাগান নিয়ে নিজের সেবকদের দান করবে এবং তোমাদের শস্যক্ষেত ও আংগুর ক্ষেতের এক দশমাংশ নিয়ে নিজের সেনাদল ও সেবকদের দান করে দেবে। তোমাদের চাকর-বাকর, ক্রীতদাসী, সুশ্রী যুবকবৃন্দ ও গাধাগুলোকে নিজের কাজে লাগাবে এবং তোমাদের ছাগল-ভেড়াগুলোর এক দশমাংশ নেবে। সুতরা তোমরা তার দাসে পরিণত হবে। সেদিন তোমাদের এই বাদশাহ, যাকে তোমরা নিজেদের জন্য নির্বাচিত করবে তার কারণে তোমরা ফরিয়াদ করবে কিন্তু সেদিন সদাপ্রভূ তোমাদের কোন জবাব দেবেন না। তবুও লোকেরা সামুয়েলের কথা শোনেনি। তারা বলতে থাকে, না আমরা বাদশাহ চাই, যে আমাদের ওপর কর্তৃত্ব করবে। তাহলে আমরাও অন্য জাতিদের মতো হবো। আমাদের বাদশাহ আমাদের মধ্যে সুবিচার করবে, আমাদের আগে আগে চলবে এবং আমাদের জন্য যুদ্ধ করবে।………………. সদাপ্রভূ সামুয়েলকে বললেনঃ তুমি ওদের কথা মেনে নাও এবং ওদের জন্য একজন বাদশাহ নিযুক্ত করে দাও।”
وَ قَالَ لَهُمْ نَبِیُّهُمْ اِنَّ اللّٰهَ قَدْ بَعَثَ لَكُمْ طَالُوْتَ مَلِكًا١ؕ قَالُوْۤا اَنّٰى یَكُوْنُ لَهُ الْمُلْكُ عَلَیْنَا وَ نَحْنُ اَحَقُّ بِالْمُلْكِ مِنْهُ وَ لَمْ یُؤْتَ سَعَةً مِّنَ الْمَالِ١ؕ قَالَ اِنَّ اللّٰهَ اصْطَفٰىهُ عَلَیْكُمْ وَ زَادَهٗ بَسْطَةً فِی الْعِلْمِ وَ الْجِسْمِ١ؕ وَ اللّٰهُ یُؤْتِیْ مُلْكَهٗ مَنْ یَّشَآءُ١ؕ وَ اللّٰهُ وَاسِعٌ عَلِیْمٌ
তাদের নবী তাদেরকে বললোঃ আল্লাহ তোমাদের জন্য তালুতকে বাদশাহ বানিয়ে দিয়েছেন। একথা শুনে তারা বললোঃ “সে কেমন করে আমাদের ওপর বাদশাহ হবার অধিকার লাভ করলো? তার তুলনায় বাদশাহী লাভের অধিকার আমাদের অনেক বেশী। সে তো কোন বড় সম্পদশালী লোকও নয়।” নবী জবাব দিলঃ “আল্লাহ্ তোমাদের মোকাবিলায় তাকেই নবী মনোনীত করেছেন এবং তাকে বুদ্ধিবৃত্তিক ও শারীরিক উভয় ধরনের যোগ্যতা ব্যাপকহারে দান করেছেন। আর আল্লাহ তাঁর রাজ্য যাকে ইচ্ছা দান করার ইখতিয়ার রাখেন। আল্লাহ অত্যন্ত ব্যাপকতার অধিকারী এবং সবকিছুই তাঁর জ্ঞান-সীমার মধ্যে রয়েছে।”
ব্যাখ্যা:-
বাইবেলে তাকে ‘শৌল’ নামে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি ছিলেন বনী ইয়ামীন গোত্রের একজন ত্রিশ বছরের যুবক। বনী ইসরাঈলদের মধ্যে তার চেয়ে সুন্দর ও সুশ্রী পুরুষ দ্বিতীয় জন ছিল না। তিনি এমনি সুঠাম ও দীর্ঘ দেহের অধিকারী ছিলেন যে, লোকদের মাথা বড়জোর তার কাঁধ পর্যন্ত পৌঁছতো। নিজের বাপের হারানো গাধা খুঁজতে বের হয়েছিলেন। পথে সামুয়েল নবীর অবস্থান স্থলের কাছে পৌঁছলে আল্লাহ তাঁর নবীকে ইংগীত করে জানালেন, এই ব্যক্তিকে আমি বনী ইসরাঈলদের বাদশাহ হিসেব মনোনীত করেছি। কাজেই সামুয়েল নবী তাকে নিজের গৃহে ডেকে আনলেন। তেলের কুপি নিয়ে তার মাথায় ঢেলে দিলেন এবং তাকে চুমো খেয়ে বললেনঃ “খোদা তোমাকে ‘মসহ’ করেছেন, যাতে তুমি তার উত্তরাধিকারের অগ্রনায়ক হতে পারো।” অতঃপর তিনি বনী ইসরাঈলদের সাধারণ সভা ডেকে তার বাদশাহ হবার কথা ঘোষণা করে দিলেন।”
وَ قَالَ لَهُمْ نَبِیُّهُمْ اِنَّ اٰیَةَ مُلْكِهٖۤ اَنْ یَّاْتِیَكُمُ التَّابُوْتُ فِیْهِ سَكِیْنَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَ بَقِیَّةٌ مِّمَّا تَرَكَ اٰلُ مُوْسٰى وَ اٰلُ هٰرُوْنَ تَحْمِلُهُ الْمَلٰٓئِكَةُ١ؕ اِنَّ فِیْ ذٰلِكَ لَاٰیَةً لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِیْنَ۠
এই সঙ্গে তাদের নবী তাদের একথাও জানিয়ে দিলঃ আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে বাদশাহ নিযুক্ত করার আলামত হচ্ছে এই যে, তার আমলে সেই সিন্ধুকটি তোমরা ফিরিয়ে পাবে, যার মধ্যে রয়েছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য মানসিক প্রশান্তির সামগ্রী, যার মধ্যে রয়েছে মূসার পরিবারের ও হারুনের পরিবারের পরিত্যক্ত বরকতপূর্ণ জিনিসপত্র এবং যাকে এখন ফেরেশতারা বহন করে ফিরছে। যদি তোমরা মু’মিন হয়ে থাকো তাহলে এটি তোমাদের জন্য অনেক বড় নিশানী।
ব্যাখ্যা:-
এ প্রসঙ্গে বাইবেলের বর্ণনা কুরআন থেকে বেশ কিছুটা বিভিন্ন। তবুও এ থেকে আসল ঘটনার যথেষ্ট বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। এ থেকে জানা যায়, এ সিন্দুকটির জন্য বনী ইসরাঈলদের মধ্যে একটি বিশেষ পরিভাষার সৃষ্টি হয়েছিল। সেটি হচ্ছে ‘অঙ্গীকার সিন্দুক’। এক যুদ্ধে ফিলিস্তিনী মুশরিকরা বনী ইসরাঈলদের থেকে এটি ছিনিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু মুশরিকদের যে শহর ও যে জনপদে এটি রাখা হতো সেখানেই মহামারীর প্রাদুর্ভাব হতে থাকতো ব্যাপকভাবে। অবশেষে তারা সিন্দুকটি একটি গরুর গাড়ির ওপর রেখে হাঁকিয়ে দিয়েছিল। সম্ভবত এ বিষয়টিকে কুরআন এভাবে বর্ণনা করেছে যে, সেটি তখন ফেরেশতাদের রক্ষণাধীনে ছিল। কারণ সেই গাড়িটিতে কোন চালক না বসিয়ে তাকে হাঁকিয়ে দেয়া হয়েছিল। আর আল্লাহর হুকুমে তাকে হাঁকিয়ে বনী ইসরাঈলদের দিকে নিয়ে আসা ছিল ফেরেশতাদের কাজ। আর এই সিন্দুকের “মধ্যে রয়েছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য মানসিক প্রশান্তির সামগ্রী”-একথার অর্থ বাইবেলের বর্ণনা থেকে যা পাওয়া যায় তা হচ্ছে এই যে, বনী ইসরাঈল এই সিন্দুকটিকে অত্যন্ত বরকতপূর্ণ এবং নিজেদের বিজয় ও সাফল্যের প্রতীক মনে করতো। এটি তাদের হাতছাড়া হবার পর সমগ্র জাতির মনোবল ভেঙে পড়ে। প্রত্যেক ইসরাঈলী মনে করতে থাকে, আমাদের ওপর থেকে আল্লাহর রহমত উঠে গেছে এবং আমাদের দুর্ভাগ্যের দিন শুরু হয়ে গেছে। কাজেই সিন্দুকটি ফিরে আসায় সমগ্র জাতির মনোবল ব্যাপকহারে বেড়ে যায়। তাদের ভাঙা মনোবল আবার জোড়া লেগে যায়। এভাবে এটি তাদের মানসিক প্রশান্তির কারণে পরিণত হয়।“মূসা ও হারুণের পরিবারের পরিত্যক্ত বরকতপূর্ণ জিনিসপত্র” এই সিন্দুকে রক্ষিত ছিল। এর অর্থ হচ্ছে, ‘তূর-ই-সিনাই’-এ (সিনাই পাহাড়) মহান আল্লাহ হযরত মূসাকে পাথরের যে তখতিগুলো দিয়েছিলেন। এছাড়াও হযরত মূসা নিজে লিখিয়ে তাওরাতের যে কপিটি বনী লাভীকে দিয়েছিলেন সেই মূল পাণ্ডুলিপিটিও এর মধ্যে ছিল। একটি বোতলে কিছুটা “মান্না’ও এর মধ্যে রক্ষিত ছিল, যাতে পরবর্তী বংশধররা আল্লাহর সেই মহা অনুগ্রহের কথা স্মরণ করতে পারে, যা মহান আল্লাহ ঊষর মরুর বুকে তাদের বাপ-দাদাদের ওপর বর্ষণ করেছিলেন। আর সম্ভবত অসাধারণ মু’জিযা তথা মহা অলৌকিক কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু হযরত মূসার সেই বিখ্যাত ‘আসা’ও এর মধ্যে ছিল।
فَلَمَّا فَصَلَ طَالُوْتُ بِالْجُنُوْدِ١ۙ قَالَ اِنَّ اللّٰهَ مُبْتَلِیْكُمْ بِنَهَرٍ١ۚ فَمَنْ شَرِبَ مِنْهُ فَلَیْسَ مِنِّیْ١ۚ وَ مَنْ لَّمْ یَطْعَمْهُ فَاِنَّهٗ مِنِّیْۤ اِلَّا مَنِ اغْتَرَفَ غُرْفَةًۢ بِیَدِهٖ١ۚ فَشَرِبُوْا مِنْهُ اِلَّا قَلِیْلًا مِّنْهُمْ١ؕ فَلَمَّا جَاوَزَهٗ هُوَ وَ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا مَعَهٗ١ۙ قَالُوْا لَا طَاقَةَ لَنَا الْیَوْمَ بِجَالُوْتَ وَ جُنُوْدِهٖ١ؕ قَالَ الَّذِیْنَ یَظُنُّوْنَ اَنَّهُمْ مُّلٰقُوا اللّٰهِ١ۙ كَمْ مِّنْ فِئَةٍ قَلِیْلَةٍ غَلَبَتْ فِئَةً كَثِیْرَةًۢ بِاِذْنِ اللّٰهِ١ؕ وَ اللّٰهُ مَعَ الصّٰبِرِیْنَ
তারপর তালুত যখন সেনাবিহনী নিয়ে এগিয়ে চললো, সে বললোঃ “আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি নদীতে তোমাদের পরীক্ষা হবে। যে তার পানি পান করবে সে আমার সহযোগী নয়। একমাত্র সে-ই আমার সহযোগী যে তার পানি থেকে নিজের পিপাসা নিবৃ্ত্ত করবে না। তবে এক আধ আজঁলা কেউ পান করতে চাইলে করতে পারে। কিন্তু স্বল্প সংখ্যক লোক ছাড়া বাকি সবাই সেই নদীর পানি আকন্ঠপান করলো। অতঃপর তালুত ও তার সাথী মুসলমানরা যখন নদী পেরিয়ে সামনে এগিয়ে গেলো তখন তারা তালুতকে বলে দিল, আজ জালুত ও তার সেনাদলের মোকাবিলা করার ক্ষমতা আমাদের নেই।
(সম্ভবত এ বাক্যটি তারাই উচ্চারণ করেছিল, যারা নদীর তীরে ইতিপূর্বেই নিজেদের ধৈর্যহীনতার প্রকাশ ঘটিয়েছিল।) কিন্তু যারা একথা মনে করছিল যে, তাদের একদিন আল্লাহর সাথে মোলাকাত হবে, তারা বললোঃ “অনেক বারই দেখা গেছে, স্বল্প সংখ্যক লোকের একটি দল আল্লাহর হুকুমে একটি বিরাট দলের ওপর বিজয় লাভ করেছে। আল্লাহ সবরকারীদের সাথি।”
ব্যখ্যা:-
সম্ভবত এটি জর্দান নদী অথবা অন্য কোন নদী, উপনদী বা শাখা নদী হতে পারে। তালুত বনী ইসরাঈলের সেনাবাহিনী নিয়ে এই নদীর তীরে অবস্থান করতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু যেহেতু তিনি জানতেন, এই জাতির নৈতিক সংযমের মাত্রা অনেক কম, তাই তিনি কর্মঠ ও অকর্মণ্য লোকদের আলাদা করার জন্য এই প্রস্তাবটি পেশ করেন। বলা বাহুল্য যারা মাত্র সামান্য ক্ষণের জন্য নিজেদের পিপাসা সংযত করতে পারে না, তাদের থেকে কেমন করে আশা করা যেতে পারে যে, তারা দৃঢ়তা ও সাহসিকতার সাথে এমন একদল শত্রুর মোকাবিলা করবে, যাদের কাছে তারা ইতিপূর্বে হেরে গিয়েছিল?।
وَ لَمَّا بَرَزُوْا لِجَالُوْتَ وَ جُنُوْدِهٖ قَالُوْا رَبَّنَاۤ اَفْرِغْ عَلَیْنَا صَبْرًا وَّ ثَبِّتْ اَقْدَامَنَا وَ انْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكٰفِرِیْنَؕ
আর যখন তারা জালুত ও তার সেনাদলের মোকাবিলায় বের হলো, তারা দোয়া করলোঃ “হে আমাদের রব! আমাদের সবর দান করো, আমাদের অবিচলিত রাখ এবং এই কাফের দলের ওপর আমাদের বিজয় দান করো।”
فَهَزَمُوۡهُمۡ بِاِذۡنِ اللّٰهِ, وَقَتَلَ دَاوٗدُ جَالُوۡتَ وَاٰتٰٮهُ اللّٰهُ الۡمُلۡكَ وَالۡحِکۡمَةَ وَعَلَّمَهٗ مِمَّا يَشَآءُؕ وَلَوۡلَا دَفۡعُ اللّٰهِ النَّاسَ بَعۡضَهُمۡ بِبَعۡضٍ لَّفَسَدَتِ الۡاَرۡضُ وَلٰکِنَّ اللّٰهَ ذُوۡ فَضۡلٍ عَلَى الۡعٰلَمِيۡنَ
অবশেষে আল্লাহর হুকুমে তারা কাফেরদের পরাজিত করলো। আর দাউদ জালুতকে হত্যা করলো এবং আল্লাহ তাকে রাজ্য ও প্রজ্ঞা দান করলেন আর সেই সাথে যা যা তিনি চাইলেন তাকে শিখিয়ে দিলেন। এভাবে আল্লাহ যদি মানুষদের একটি দলের সাহায্যে আর একটি দলকে দমন না করতে থাকতেন, তাহলে পৃথিবীর ব্যবস্থাপনা বিপর্যস্ত হতো।কিন্তু দুনিয়াবাসীদের ওপর আল্লাহর অপার করুণা (যে, তিনি এভাবে বিপর্যয় রোধের ব্যবস্থা করতেন) ।
ব্যখ্যাঃ-
দাউদ আলাইহিস সালাম এ সময় ছিলেন একজন কম বয়েসী যুবক। ঘটনাক্রমে তালুতের সেনাবাহিনীতে তিনি এমন এক সময় পৌঁছে ছিলেন যখন ফিলিস্তিনী সেনাদলের জবরদস্ত পাহলোয়ান জালুত (জুলিয়েট) বনী ইসরাঈলী সেনাদলকে প্রত্যক্ষ মুকাবিলায় আসার জন্য আহবান জানাচ্ছিল এবং ইসরাঈলীদের মধ্য থেকে একজনও তার সাথে মোকাবিলা করার জন্য এগিয়ে যাচ্ছিল না। এ অবস্থা দেখে দাউদ (আ) নির্ভয়ে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং জালুতকে হত্যা করলেন। এ ঘটনায় তিনি হয়ে উঠলেন ইসরাঈলীদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়। তালুত নিজের মেয়ের সাথে তাঁর বিয়ে দিলেন। অবশেষে তিনিই হলেন ইসরাঈলীদের শাসক।
ফুটনোটঃ আল-বাক্বারাহ,:আয়াত: ২৪৬ - ২৫২
তথ্যসূত্রঃ তাফহীমুল কুর্াআন ২য় খন্ড
কোন মন্তব্য নেই