সবাই একরকম হয় না।

 সবাই একরকম হয় না।

কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের ক্ষেত্রে আল্লাহ তাদের অনেক কিছু সহজ করে দেন। কারও কারও জন্য আল্লাহ টাকা-পয়সা সহজ করে দেন। একেবারেই সহজ। আপনাদের কারও কারও জন্য আত্মবিশ্বাস রাখা সহজ। এটা আপনার কাছে বিশেষ কোনো ব্যাপার মনে হচ্ছে না। কিন্তু অন্য অনেকে এক্ষেত্রে বিচলিত হয়ে পড়ে, আপনারা হোন না।

আমার কিছু কিছু ছাত্র আছে যাদের জন্য পড়াশোনা খুব সহজ। আমি আরবী শিখাই। আমি বলতে পারি আমার কিছু ছাত্রের জন্য আল্লাহ আরবী সহজ করে দিয়েছেন। আবার অন্য এক ছাত্রের বেলায় বলি, সে আসলে আরবী শেখার জন্য উপযোগী না। সে তার ফিল্ডে খুবই স্মার্ট-দক্ষ। সে পদার্থ বিজ্ঞানে পিএইচডি করছে। কিন্তু সে আরবী ব্যাকরণের মুদাফ-মুদাফ ইলাই গঠন করতে পারে না। পারে না মানে পারেই না। সে ঠিক এটার জন্য না। এটা তার জন্য কঠিন।

সবাই একরকম না। হয় কী জানেন? মানুষ যখন নিজের সাফল্যে অভ্যস্ত হয়ে যায়, যেমন আল্লাহ একটা জিনিস সহজ করে দেন, তারপরেরটাও সহজ করে দেন, তারপরেরটাও সহজ করে দেন, তারপরেরটাও…। তবে সবকিছুই তো আর সবসময় সহজ থাকবে না, তাই না? কিছু কিছু সময় আপনারা ব্যর্থও হোন। একজন ছাত্র প্রথমবার ১০০ পায়, দ্বিতীয় বার, ৩য় বার, ৪র্থ বারও। আর পঞ্চম বার হঠাৎ করেই পায় ৫০। পূর্ব থেকে সে ১০০ পেয়েই অভ্যস্ত। তখন সে বলে—‘ওহ আমার মনে হয় আমি এর যোগ্যই না, আল্লাহ আর আমার সাথে নেই।’
এখানে আসলে কী ঘটে জানেন? যেহেতু আপনি খুব উচু স্থানে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন…তাই একটা ছোট ব্যর্থতা বা অবস্থার একটু অবনতির সাথে সাথেই আপনি ভেঙ্গে পড়েন। একেবারেই ভেঙ্গে পড়েন। ব্যাপারটা মনে হয় যেন আমিতো স্কুল থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছি। ‘ধুর আমি আর কিছুই করব না। আমি এটা ঘৃণা করি।’ এর কারণ কী জানেন?
আপনার প্রতিটা সফলতার সময় আপনি নিজেকে একটা জিনিস মনে করিয়ে দেননি। সমস্ত সফলতাই দুটা জিনিসের সমন্বয়ে তৈরি হয়; আপনার প্রচেষ্টা আর আল্লাহর সাহায্য।
আগে প্রতিবার যখনি আপনি ১০০ পেয়েছিলেন, এমন না যে সেটা সহজ ছিল বলে পেয়েছেন। আপনি চেষ্টা করেছেন আর আল্লাহ সেই চেষ্টায় বারাকাহ দিয়েছেন। আপনি চেষ্টা করেন আর আল্লাহ তাতে বারাকাহ দিয়ে অনেক বৃদ্ধি করে দেন, সহজ করে দেন।
এবার যখন সফলতা আসলো না তখন দুটো ভুল হতে পারে; এক, হয়ত আপনি যথেষ্ট চেষ্টা করেননি। যখন আপনি যথেষ্ট চেষ্টা করেন না, আল্লাহ তাতে বারাকাহ দেন না। কিংবা হয়তো আপনি যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন কিন্তু আল্লাহ বারাকাহ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ হয়তো এই না পাওয়াতেই আপনার জন্য কল্যাণকর কিছু রয়েছে।
আমার সবচে ভালো বন্ধুদের হিন্দু ছিল। সে মেডিকেল স্কুলে পড়তে চেয়েছিল। A+ পাওয়া ছাত্র। সারাজীবন A+ পেয়েছে; নিখুঁত নাম্বার। SAT পরীক্ষায়ও সবচে বেশি নাম্বার পেয়েছে। মেডিকেল স্কুলে আবেদন করে সে ফুল স্কলারশিপ আশা করছিল। কিন্তু প্রত্যাখ্যাত হয়। তখন সে পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়ল। শেষ পর্যন্ত সে অন্য ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়। মেডিকেলের পরিবর্তে সে কম্পিউটার সায়েন্স পড়বে বলে ঠিক করল। সে তখনও হিন্দু ছিল। অবস্থার কারণে সে পুরোপুরি বিষণ্ণ হয়ে পড়েছিল। নতুন কলেজে সে নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হলো। তাদের মাঝে অনেক মুসলিমও ছিল যাদের সাথে সে উঠাবসা শুরু করল। আর দুই বছরের মধ্যে সে শাহাদাহ গ্রহণ করে মুসলিম হয়ে গেল।
এখন যখন সে পিছনে ফিরে দেখে, সে বলে—
❝আল্লাহকে ধন্যবাদ যে আমি মেডিকেল স্কুলে যেতে পারিনি। মেডিকেল স্কুলের ব্যর্থতার পর আমি ভেবেছিলাম এর চেয়ে খারাপ কিছু আর আমার জীবনে হয়নি। আর যখন আমি পিছনে ফিরে আমার জীবনের দিকে তাকাই, আমি বলি—আমি যে মেডিকেল স্কুলে ব্যর্থ হয়েছি এর চেয়ে ভালো কিছু আমার আর জীবনে হয়নি।❞
ভাবতে পারেন তার বাচ্চারা এখন কুরআন মুখস্ত করছে! যখন সে মুসলিম হলো তার বাবা খুব ধাক্কা খেয়েছিল। তিনি তাকে জোর করে ভারতে নিয়ে গিয়েছিল আবার হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত করার জন্য। সেখান থেকে সে পালিয়ে আবার এখানে চলে আসলো। এখন তার বাচ্চারা কুরআন মুখস্ত করছে! সুবহানআল্লাহ!
আমাদের আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। যখনই আমরা সাফল্যের শিখরে চড়তে অভ্যস্ত হয়ে যাই, তারপর একটু অবস্থার অবনতি হলেই আমরা আল্লাহর উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলি।
আবার কিছু কিছু মানুষ আছে যাদেরকে আল্লাহ একবার কিছু অসুবিধায় ফেলেন, তারপর আরেকটা ঝামেলায় ফেলেন, তারপর আরেকটা, তারপর আরেকটা…আর তখন আপনি বিশ্বাস করা শুরু করেন আমি কখনই কিছু অর্জন করতে পারব না। “আমার জীবনটা খুব জটিল। সবকিছুই আমার জন্য কঠিন। আমি খালি চাকরি হারাচ্ছি, পরীক্ষায় ফেইল করছি।”
তখন আপনি হতাশ হয়ে যান। আপনাকে মনে রাখতে হবে—
এই দুনিয়ায় যত সফলতা রয়েছে সবকিছু দুটো জিনিসের সমন্বয়ে গঠিত হয়: “আমাকে আমার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, আর আল্লাহ আমার কাজটা সহজ করে দিবেন।”
আল্লাহর উপর আস্থা রাখুন
বই : আমি ও আমার রব

--উস্তাদ নোমান আলী খান

কোন মন্তব্য নেই

luoman থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.