বদর যুদ্ধ এ এক অন্য রকম শিক্ষা

 


জায়েদ ইবনে হারেসা (রাঃ) যখন আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিতে দিতে বদর যুদ্ধের বিজয়ের খবর নিয়ে মদিনায় প্রবেশ করছিলেন, তখন একজন বিশেষ ব্যক্তিও এই তাকবীরের আওয়াজ শুনতে পেলেন। আর তিনি ছিলেন ওসমান ইবনে আফফান (রা।) তিনি মাত্র রুকাইয়া (রা) কে কবর দেয়া শেষ করলেন। যেদিন জায়েদ (রা) যুদ্ধ জয়ের খবর নিয়ে এসেছিলেন, সেই দিন, ঠিক সেই সময় হজরত ওসমান মাত্র রাসূলুল্লাহ (স) এর কন্যার দাফন সম্পন্ন করেছিলেন। তিনি তখন আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার আওয়াজ শুনতে পেলেন। "কী হয়েছে? কেন এই তাকবীর?" তখন তাকে বদর যুদ্ধের বিজয়ের খবর জানানো হল।

ব্যাপারটা নিয়ে যদি একবার ভেবে দেখেন...বদরের যুদ্ধে বিজয়ের দিন ছিল মুসলমানের জন্য, ইসলামের জন্য অন্যতম খুশির একটি দিন। এখন পর্যন্ত এর চেয়ে খুশির কোন কিছু ঘটেনি। এর চেয়ে আনন্দদায়ক কিছু ঘটেনি।

কিন্তু আল্লাহ ইচ্ছা করলেন, সেই দিন একটি ট্রাজেডিও আঘাত হানবে, ঠিক সেই ঘরে যেই ঘর সবচেয়ে বেশি আনন্দিত হওয়ার কথা ছিল। আর তা ছিল রাসূলুল্লাহ (স) এর ঘর। রাসূল (স) এর কন্যা রুকাইয়া (রা) সেদিন মৃত্যুবরণ করেন।

এর মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যেন আমাদেরকে দেখিয়ে দিচ্ছেন, তুমি যত খুশিই হও না কেন এই পৃথিবী একটি পরীক্ষা এবং কষ্ট ক্লেশের স্থান। এমনকি বদরের দিনেও....আল্লাহ যদি ইচ্ছে করতেন কিছুদিন পিছিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু, একেবারে বদরের দিন, যেদিন মুসলমানদের সবচেয়ে বেশি আনন্দিত হওয়ার কথা ছিল সেইদিন এমন একটি দুঃখজনক ঘটনাও ঘটল।

এর মাধ্যমে আমাদের সবাইকে এই মেসেজ দেয়া হচ্ছে - উপলব্ধি করার চেষ্টা করো, এই দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী। জীবন মৃত্যু কারো জন্য বন্ধ থাকে না। এর আগমন এমন সময় ঘটে যখন কেউ এটা নিয়ে ভাবে না। এটাই দুনিয়ার জীবনের বাস্তবতা। আমাদের রাসূল (স) যেমন একবার একটি রেখা টেনে বুঝিয়েছিলেন -  আমাদের সবারই অমুক অমুক কাজের বিশাল এক লিস্ট থাকে।  আর এ লিস্টের শেষে পৌঁছানোর পূর্বেই মৃত্যুর রেখা এসে তা কেটে ফেলে। তিনি এই উপমা দিয়েছেন।

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকটি রেখা আঁকলেন এবং বললেন, এটা হল মানুষ, (এটা তার আশা-আকাঙ্ক্ষা) আর এটা হল তার মৃত্যু, সে এ অবস্থার মধ্যেই থাকে; হঠাৎ নিকটবর্তী রেখা (অর্থাৎ, মৃত্যু) এসে পড়ে। (বুখারী ৬৪১৮)

আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমাদের সবারই যখন শেষ সময় এসে যাবে, তখন আমাদেরও বিভিন্নরকম কাজের বিশাল এক লিস্ট থাকবে। ''আমাকে এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে।'' কিন্তু মৃত্যুর সাথে সাথে এই লিস্টের আর কোনো মূল্য থাকবে না। মৃত্যুর সাথে সাথে এর সমাপ্তি ঘটবে। এটাই জীবনের বাস্তবতা।

আমাদের রাসূল (স) কে এই ব্যাপারটা দেখিয়ে দেয়ার মাধ্যমে আমাদের সবাইকে দেখানো হচ্ছে। কারণ, তিনি হলেন আমাদের রোল মডেল। এমনকি এমন একটা  খুশির দিনেও আমাদের জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এই দুনিয়া আনন্দ উৎযাপনের জায়গা নয়। আনন্দ উৎযাপনের আসল জায়গা হলো জান্নাত।

-- শায়েখ ইয়াসির কাদি


কোন মন্তব্য নেই

luoman থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.