"না" শব্দটির মানে কী, আসলেই না?

"না" শব্দটির মানে কী, আসলেই না? 

"না" শব্দটি আসলে তীব্রতার বিভিন্ন মাত্রায় ব্যবহৃত হয়। যেমন, ধরুন আপনি কখনো কখনো "না" বললেন, কিন্তু তার মানে কিন্তু আপনি একেবারেই অথবা পুরোপুরি "না" বলছেন না। যেমন- কারও বাসায় গেলেন, তারা বলে, “চা দেই?”

আপনি তখন কী বলেন?

—না! আরে না না!

এর মানে, আরে পাগল তাড়াতাড়ি করেন!

হাহাহা। তাই না? এমন না?

এটাই তো মানে তাই না?

অথবা বাচ্চাকাচ্চার ক্ষেত্রে! আপনি বাচ্চার পেছন দৌড়াচ্ছেন…

—“আব্বু আমাকে ধরো!”

(আমি ধরছি, তাকে ধরতে যাচ্ছি…)

—তোমাকে ধরলাম!

—“নাআআআ!!!”

—"আচ্ছা। ধরবো না।"

—“না না!! ধরো আমাকে! ধরো!”

হাহা। তাহলে না কেন?

এরপর বাচ্চাকে কাতুকুতু দিচ্ছি।

—“না বাবা! থামো! না না!”

আমি থেমে গেলাম।

—“থামলে কেন? কি হলো?”

হাহাহা। তাই না?

তো কখনো কখনো "না" মানে না নয়। কখনো "না" মানে একেবারেই না নয়।

যেমন ধরুন, স্ত্রীর মন খারাপ। স্বামী বলছে,

— “অ্যাই অ্যাই! বাইরে কোথাও খেতে যাবে?”

—“না”

—"আরে চলো! তুমি খেতে তো চাও, আমি জানি।"

—না…

—তোমাকে দেখে মনে হয় পিযযা খেতে চাও, তাই না?

—(মুচকি হেসে) না! হেহে।

হাহাহাহা।

তো কখনো না মানে পুরোপুরি না নয়। বুঝতে পারলেন? কিন্তু কখনো না মানে (চিবিয়ে চিবিয়ে উচ্চারণ করুন) একেবারেই না! (মুখ চিবিয়ে চিবিয়ে বলুন) একেবারেই না! পুরুষরা এটা জানে। যখন তাদের স্ত্রী বলেন, “আজকে আমার সাথে কথা বলবা না!" তখন ভয়ে ফিরে আসেন। চলে যান। রুটি খেয়ে জীবন যাপন করুন দরকার হলে।

আচ্ছা। তো এখানে ব্যাপারটা হলো, কুরআনের ভেতর “লা” শব্দটির মানে কী?

না।

কখনো কখনো কুরআনে এসেছে “লা খাওফুন”, “লা বাই’উন”, “লা খুল্লাতুন”। লা এর পরের শব্দে আছে উন, উন, উন। শেষের দিকে। তাই না?

এরপর যদি পরের লাইন দেখেন, একই শব্দ “লা”। কিন্তু পরের শব্দে আছে “লা রাইবা”, “লা ইকরাহা”, “লা ইলাহা”, “লা খালাকা”।

শেষে কী থাকার বদলে? উন! এটা থাকার বদলে হচ্ছে? “আ”।

এটা কিন্তু ব্যাকরণের পাঠ। কিন্তু আপনাদের বলতে চাই যে কুরআনের বাংলা অনুবাদে দুটোই একইভাবে অনুবাদ করা হয়। দুঃখজনকভাবে। দুঃখজনকভাবে।

তো লা খাওফুন এর অনুবাদ হয় “কোন ভয় নেই।”

“লা রাইবা” অনুবাদ হয় “কোন সন্দেহ নেই”।

লা খাওফুন, কোন ভয় নেই। লা রাইবা, কোন সন্দেহ নেই।

কিন্তু দুটো ভিন্ন জিনিস। আর পার্থক্যটা হলো— যখন বলেন “লা খাওফুন”, যখন “উন” দিয়ে শেষ করেন, তখন আসলে আপনি বলতে চাচ্ছেন বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই না, তবে ব্যতিক্রমও হতে পারে।

আবারও আমি এটা বলছি কিন্তু। যদি কি দিয়ে শেষ হয়? উন। তাহলে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে তা হলো “না”। কিন্তু কিছু ব্যতিক্রম থাকতেও পারে।

যখন “আ” দিয়ে শেষ করেন, যেমন “লা রাইবা”, “লা ইকরাহা”, তখন কী বলা হচ্ছে বলুন তো? কোনরকম ব্যতিক্রমের একদমই সুযোগ নেই, একটুও না। যদি না স্পষ্টভাবে বলা থাকে, কোনোভাবেই না।

বিচার দিবসে আল্লাহ বলছেন, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই বিশ্বাসীদের জন্য কোন ভয় নেই। বিশ্বাসীরা কি একটু হলেও ভয়ে থাকবে বিচার দিবসে? হ্যাঁ। বেশীরভাগ ভয় থেকে তারা বেঁচে গেছে, কিন্তু কিছু ভয়তো আছেই।

আল্লাহ বলছেন, “লা বাই’উন ফিহী”। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই বিচার দিবসে কোন লেনদেন নেই। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই। বিচার দিবসে কি একটু হলেও লেনদেন আছে? অবশ্যই। আল্লাহ বিশ্বাসীদের টাকা আর জীবন জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন। إِنَّ اللَّهَ اشْتَرٰى مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوٰلَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ - আল্লাহ নিজেই এটা বলছেন। বেশীরভাগ মানুষই এই লেনদেন করতে পারবে না। কারও কারও বিক্রি নেয়া হবে, বিচার দিবসে।

কিন্তু এখানে আছে “লা বাইউন”, “লেনদেন নেই”। কিন্তু আসল অর্থ “বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই লেনদেন নেই”।

বিচার দিবসে বলছেন, সেদিন কোন 'খুল্লাতুন' থাকবে না। লা খুল্লাতুন। ( لَّا بَیۡعٌ فِیۡهِ وَ لَا خُلَّۃٌ وَّ لَا شَفَاعَۃٌ -- [২ঃ ২৫৪]) বিচার দিবসে কোন বন্ধুত্ব থাকবে না। এটা পুরোপুরি সঠিক নয়। এর আসল অর্থ, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই বিচার দিবসে কোন বন্ধুত্ব থাকবে না। কারণ বিচার দিবসে কি আল্লাহ্‌র ছায়ায় মানুষজন থাকবে না, যাদের আল্লাহ বন্ধু বানাবেন?

অবশ্যই! তাই বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই কোন বন্ধুত্ব থাকবে না বিচার দিবসে।

এরপর আয়াতটি বলছে, “লা শাফাআতুন”, বিচার দিবসে কোন সুপারিশ থাকবে না। কেউ আপনার পক্ষে কথা বলবে না সেদিন। কেউ আল্লাহ্‌কে বলবে না, “হে আল্লাহ, এই উম্মতের প্রতি সহজ হোন। জান্নাতে যেতে দিন।” দাঁড়ান! দাঁড়ান। আসলেই? কেউ না? কেউই আমাদের পক্ষে বলবে না? কেউই সুপারিশ করবে না আমাদের হয়ে? কেউই বলবে না “উম্মাতি উম্মাতি?”

কে বলবে?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

আর এই যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাফাআত করবেন এটাই ছোট্ট “উন” এর মাঝে লুকিয়ে আছে। “লা শাফাআতুন”। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই কোন শাফাআত নেই।

চিন্তা করুন, লা শাফাআতা হলে কি হতো?

ইশ! কি ভয়ানক!

“যালিকাল কিতাবু লা রাইবা ফিইহী”। অর্থাৎ, এটি এমন একটি কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নেই। এটা কি 'লা রাইবা' নাকি 'লা রাইবুন'? লা রাইবা। পার্থক্য কি?

রাইবা মানে কী? একেবারেই কোন ধরণের সন্দেহই নেই, একটুও না। যদি বলতেন “বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই” তবে বিশাল সমস্যা হতো। অসুবিধা হতো!

আল্লাহ বলছেন, “লা ইকরাহা ফিদ্দীন”। কাউকে কোনোভাবেই একটুও জোর করা যাবে না দ্বীন গ্রহন করতে। কোন অবস্থাতেই না, একটুও না। কাউকে ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা যাবে না। এটা কুরআনে ধর্মের স্বাধীনতার ঘোষণা। “লা ইকরাহা ফিদ্দীন”। কোন অবস্থাতেই না। একেবারেই না। “বেশীরভাগ ক্ষেত্রে” না কিন্তু। বাধ্য করতে পারবে না। তবে মাঝে মধ্যে কাউকে কখনও চড় দিয়ে মুসলিম বানাতে পারবেন?

না।

“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”। এটা তো বলার দরকারই নেই।

“আল্লাহ ছাড়া কারোই কোনপ্রকার ভালবাসা, একনিষ্ঠতা, আত্মসমর্পণ পাবার অধিকার নেই, কোন অবস্থাতেই না।”

একইভাবে “লা খালাকালাহুম ফিল আখিরাহ لَا خَلَاقَ لَهُمۡ فِی الۡاٰخِرَۃِ - (৩:৭৭) ”। মুনাফিকদের ক্ষেত্রেও আল্লাহ বলছেন তাদের জন্য আখিরাতের একেবারে এতোটুকুও অংশ নেই। কোনোভাবেই নেই। “লা খালাকালাহুম ফিল আখিরাহ”

আমি এসব আলাদা করে উল্লেখ করছি কারণ আজকের সেমিনারে আমার উদ্দেশ্য হলো অনুবাদে কি হারিয়ে যায় তা আপনাদের দেখানো। আপনি অনুবাদ পড়ছেন কিন্তু এই দুটো অনুবাদ হবে ঠিক একইভাবে। দুটোর অনুবাদ একই হবে। আর এটা শেখা কিন্তু খুব বেশী কঠিন না। আপনি যদি চেষ্টা করেন, দুশো ঘন্টার কমেই পারবেন। আসলেই এতো কম। হয়তো ১২০ ঘণ্টায়। চাইলে বেশ দক্ষ হতে পারবেন।

—নোমান আলী খান


কোন মন্তব্য নেই

luoman থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.