রহমানের বান্দাদের গুণাবলী
রহমানের বান্দাদের গুণাবলী
সূরায়ে ‘ফুরকানে’র শেষ ১৫টি আয়াতে আল্লাহর নেক বান্দাদের গুণাবলী ও তাদের পুরস্কারের আলোচনা করা হয়েছে। নিম্নে পর্যায়ক্রমে আয়াতসমুহের সংক্ষিপ্ত আলোচনা পেশ করা হলো:আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেছেন :
ইবাদুর রাহমানের প্রথম গুণঃ
وَعِبَادُ الرَّحْمَنِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الأرْضِ هَوْنًا
অর্থাৎ- তারা যমীনে নম্রভাবে চলে। আয়াতে বর্ণিত “হাওনা” শব্দের অর্থ স্থিরতা, বিনয়, গাম্ভীর্য। (সূরা ফুরকান, ৬৩নং আয়াতাংশ)। অর্থাৎ- আল্লাহর খাস বান্দাগণ যমীনে বিনয় ও নম্রতার সাথে চলাফেরা
হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “অহংকার আমার চাদর এবং গৌরব আমার ইজার। যে আমার চাদর নিয়ে টানাটানি করে (অহংকার করে) আমি তাকে জাহান্নামে দিব।”
অন্য হাদীসে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি দুনিয়ার জীবনে অহংকার করে নিজেকে বড় দেখাবে ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তায়ালা তাকে পিপিলিকার মত ছোট করে উঠাবেন।”
ইবাদুর রাহমানের দ্বিতীয় গুণঃ
وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلامًا
অর্থাৎ- মূর্খ লোকরা যখন তাদের সাথে বিতর্ক করতে চায় তখন তারা ওদেরকে সালাম বলে এড়িয়ে যায়। (সূরা ফুরকান, ৬৩নং আয়াতাংশ)। অর্থাৎ মূর্খ লোকদের সাথে তারা তর্কে অবতীর্ণ হয় না। এবং তারা জাহেলদের ঠাট্টা-বিদ্রুপ, উস্কানীমূলক আচরণ নীরবে সহ্য করে এবং ওদরকে ক্ষমা করে দেয়। আর তারা মূর্খদের মন্দ ব্যবহারের জবাবে নিরাপত্তার কথাবার্তা বলে যাতে অন্যরা কষ্ট না পায়; এবং নিজেরাও গুনাহ্গার না হয়। এরূপ উত্তম ব্যবহার ইবাদুর রহমানের এক বড় গুণ।
ইবাদুর রাহমানের তৃতীয় গুণঃ
وَالَّذِينَ يَبِيتُونَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَقِيَامًا
অর্থাৎ- তারা রাত অতিবাহিত করে তাদের প্রতিপালকের সামনে সিজদা ও দাঁড়ানো অবস্থায়। (সূরা ফুরকান, ৬৪নং আয়াত)। অর্থাৎ তারা আরামের বিছানা ত্যাগ করে, ঘুম ও তন্দ্রা উপেক্ষা করে সারা রাত আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকে। বস্তুতঃ রাত দিনের চেয়ে অধিক মূল্যবান। তাই তো শবেকদর, শবে বরাত, শবে মি’রাজ এত মর্যাদাবান। পবিত্র কুরআনও নাযিল হয়েছে রাতের বেলায়। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় আমি এই কুরআনকে নাযিল করেছি সম্মানিত রজনীতে। এ জন্য ইবাদতে রাত্রি জাগরণ ও শেষ রাতে তাহাজ্জুদের নামায আল্লাহর নিকট বড় পছন্দনীয়।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়; কেননা, এটা তোমাদের পূর্ববর্তী সকল নেককার বান্দাগণের অভ্যাস ছিল। তাহাজ্জুদ আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য দানকারী, মন্দ কাজের কাফ্ফারা এবং গুনাহ্ থেকে নিবৃত্তকারী। (মাআরিফুল কুরআনের উদ্ধৃতিতে মাযহারী)।
শেষ রাত্রে জাগ্রত হওয়া নবী, রাসূল, ওলী, বুযুর্গ, তথা সকল আল্লাহ প্রেমিকের সুন্নাত বা তরীকা।
আল্লামা ইকবাল বলেন- “প্রেম যখন প্রেমিককে শেষ রাত্রে জাগ্রত হওয়ার সদাচারণ শিক্ষা দেয় তখন প্রেমাস্পদের ভেদ প্রেমিকের সম্মুখে উন্মোচিত হয়। যুগের আত্তার, রূমী, রাযী এবং গাজালী হলেও কিছুই লাভ করা সম্ভব নয়, শেষ রাতের একাগ্রতার বিলাপ ছাড়া।”
ইবাদুর রাহমানের চতুর্থ গুণঃ
وَالَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ
অর্থাৎ- তারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের কাছ থেকে জাহান্নামের শাস্তি হটিয়ে দাও। (সূরা ফুরকান, ৬৫নং আয়াতাংশ)। অর্থাৎ- তারা দিবা-রাত্রি ইবাদতে মশগুল থাকার পরও আল্লাহর ভয় এবং আখেরাতের চিন্তায় অস্থির থাকে। তাই সর্বদা আল্লাহর দরবারে মুনাজাত করে বলে, “হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের থেকে জাহান্নামের আযাব দূরে রাখ।”
ইবাদুর রাহমানের পঞ্চম গুণঃ
وَالَّذِينَ إِذَا أَنفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذَٰلِكَ قَوَامًا
অর্থাৎ- “তারা ব্যয় করার সময় অযথা ব্যয় করেনা। আর কৃপণতাও করেনা। বরং মধ্যপন্থা অবলম্বন করে।” (সূরা ফুরকান- ৬৭)। ‘ইসরাফ’ শব্দের অর্থ সীমার অতিরিক্ত ব্যয়। শরীয়তের পরিভাষায় আল্লাহর অবাধ্যতার (গুনাহর) কাজে ব্যয় করাও ‘ইসরাফ’, যদিও তা সামান্য হয়। অনেকের মতে বৈধ কাজে অতিরিক্ত ব্যয় করাও ইসরাফ বা অপব্যয়ের শামীল। আল্লাহর নিয়ামতের অপচয় বড় শক্ত গুনাহ্। আল্লাহ তায়ালা অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।
কুরআনে কারীমে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “নিশ্চয় অপচয়কারী শয়তানের ভাই।” অর্থাৎ অপচয় শয়তানের অভ্যাস। আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ কখনও অপচয় করেন না। আবার একেবারে মুঠো শক্ত করে রাখা যাবে না। অর্থাৎ কৃপণতা থেকে দূরে থাকতে হবে। খরচ করতে হবে মাঝামাঝি পন্থায়। অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন, তুমি একেবারে ব্যয়কুণ্ঠ হয়ো না এবং একেবারে মুক্ত হস্তও হয়ো না। তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে। তাই আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ খরচের ব্যাপারে মধ্যবর্তী পন্থা অবলম্বন করেন।
ইবাদুর রাহমানের ষষ্ঠ গুণঃ
وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَٰهًا آخَرَ
অর্থাৎ- “তারা আল্লাহর সাথে কাউকে ডাকে না।” (সূরা ফুরকান, ৬৮নং আয়াতাংশ)। অন্য কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করে না। অর্থাৎ আল্লাহর সাথে শিরক্ করে না। শিরক একটি মহাপাপ। আল্লাহ শিরকের গুনাহ্ মাফ করেন না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আমি অন্যান্য সব গুনাহ্ মাফ করবো কিন্তু শিরকের গুনাহ মাফ করবো না।” শিরক আল্লাহ তায়ালার বড় অসহ্য। পৃথিবীতে অসংখ্য নবী-রাসূল প্রেরণ করা হয়েছে শিরকের মূলোৎপাটনের জন্য।
র্শিক দুই প্রকার। যথা- এক. শিরকে জলী বা প্রকাশ্য শিরক। দুই. শিরকে খফী বা অপ্রকাশ্য শিরক। প্রকাশ্য শিরক যেমন, দেব-দেবীর পূজা, পূর্তিপূজা, পীরপূজা, মাজারপূজা ইত্যাদি। পীর বা মাজারে কিছু চাওয়া, সিজদা করা প্রকাশ্য শিরক। দেব-দেবীর পূজা করা যে শিরক তা আমরা ঠিকই বুঝি; কিন্তু পীরপূজা, মাজারে সিজদা করা যে শিরক তা আমাদের দেশের মানুষ বুঝে না। তাই আমাদের দেশের মানুষ মাজারে মাজারে ঘুরাঘুরি করে মাকসাদ হাসিলের জন্য। সিজদা করতে থাকে বেপরোয়াভাবে। অথচ বান্দার সিজদার মালিক হলেন একমাত্র আল্লাহ তায়ালা।
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, এক সাহাবী মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, অমুক দেশের প্রজাসাধারণ তাদের বাদশাকে সিজদা করে, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তো সৃষ্টির সেরা, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া আপনি কি আমাদের সিজদা পাওয়ার যোগ্য নন?
জবাবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ ব্যতীত আর কারো উদ্দেশ্যে সিজদা করা হারাম। যদি সিজদা অন্য কারো জন্য জায়েয হতো তবে আমি স্ত্রীগণকে তাদের স্বামীদের সিজদা করার আদেশ দিতাম।
সৃষ্টির সেরা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি সিজদা পাওয়ার উপযুক্ত না হন; তাহলে কোথাকার পীর বা পাগলা বাবা, মাজারের বাবা, লেংটা বাবা; এরা কীভাবে সিজদার যোগ্য হয়? সুতরাং আল্লাহ ব্যতীত আর কাউকে সিজদা করা যাবে না। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বুঝবার তাওফীক দান করুন।
দ্বিতীয় প্রকার হচ্ছে ক্ষুদ্র বা অপ্রকাশ্য শিরক।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আমি তোমাদের জন্য যা ভয় করি তা হচ্ছে অপ্রকাশ্য বা ক্ষুদ্র শিরক। সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন, অপ্রকাশ্য শিরক কি? জবাবে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তা হচ্ছে রিয়া বা আত্মপ্রদর্শনী।” লোক দেখানো বা মানুষের প্রশংসা কুড়ানোর উদ্দেশ্যে ইবাদত করার নামই রিয়া। রিয়া এক প্রকার শিরক। এটা মানুষের সব নেক আমল বরবাদ করে দেয়। আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ উভয় প্রকার শিরক থেকে নিজেকে হিফাযত করেন। তাই তো তারা রাতের অন্ধকারে নিরব-নিস্তব্ধ পরিবেশে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হন। যখন রিয়া বা লোক দেখানোর কোন অবকাশ থাকে না।
ইবাদুর রাহমানের সপ্তম গুণঃ
وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ
অর্থাৎ- “তারা এমন লোককে হত্যা করেনা যার হত্যা আল্লাহ অবৈধ করেছেন”। (সূরা ফুরকান, ৬৮নং আয়াতাংশ)। কোন মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা মহাপাপ। কোন নির্দোষ মু’মিনকে হত্যা করা বৈধ মনে করা কুফর। যার পরিণাম হবে মারাÍক ভয়াবহ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যে কেউ কোন মু’মিনকে ইচ্ছাকৃত হত্যা করে তার শাস্তি জাহান্নাম। তাতে সে চিরকাল থাকবে।” আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ মানুষ হত্যার মত মহাপাপের কাছেও যায় না।
ইবাদুর রাহমানের অষ্টম গুণঃ
وَلَا يَزْنُونَ ۚ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ يَلْقَ أَثَامًا
অর্থাৎ- “তারা যিনা বা ব্যভিচারের নিকটবর্তীও হয় না”। (সূরা ফুরকান, ৬৮নং আয়াতাংশ)। অর্থাৎ- আল্লাহর খাস বান্দাগণ যিনা তো করেনা এমনকি যিনার নিকটবর্তীও হয় না। যিনা একটি জঘন্য পাপ। সকল সভ্য সমাজেই যিনা একটি অমার্জনীয় অপরাধ বলে বিবেচিত। প্রায় সকল ধর্মগ্রন্থেই যিনা হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আজকের পাশ্চাত্য বিশ্ব নারী অধিকার বা নারী স্বাধীনতার নামে যিনার লাগাম খুলে দিয়েছে।
পারিবারিক অবকাঠামো ভেংগে দিয়ে নারীকে পণ্যসামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অবাধ যৌনাচারের জন্য ‘ফ্রি সেক্স ক্লাব’ খুলে দেওয়া হচ্ছে স্থানে স্থানে। চলন্ত বাসে, রাস্তার ধারে, দোকানপাটে কুকুরের ন্যায় অবাধ যৌনাচারকে যৌন স্বাধীনতা বলে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে।
প্রিয় পাঠক! এই যদি হয় আশ্রাফুল মাখলূকের রুচি, এরই নাম যদি হয় অধিকার বা স্বাধীনতা, তাহলে পশু আর মানুষের মাঝে পার্থক্যটা কোথায় রইল? পশু যখন, যেখানে, যার সাথে ইচ্ছা যৌন ক্ষুধা মিটিয়ে নিতে পারে। মানুষও যদি তাই পারে; তাহলে মানুষতো পশুর চেয়ে অধম সাব্যস্ত হবে। কেননা পশুর জন্য রুচি-অরুচি, লজ্জা-শরমের প্রশ্ন নেই, নেই হারাম হালালের বিধান, নেই হদ বা শাস্তির বিধান। পক্ষান্তরে লজ্জাশরম মানুষের স্বভাবজাত একটি গুণ। যার লজ্জা নেই তার মনুষ্যত্ব নেই। লজ্জা ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। আর ব্যভিচার হচ্ছে নির্লজ্জ, অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। তাই আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ যিনা তো করেন না; যিনার নিকটবর্তীও হন না।
ইবাদুর রাহমানের নবম গুণঃ
وَالَّذِينَ لَا يَشْهَدُونَ الزُّورَ
অর্থাৎ- তারা মিথ্যা ও বাতিল মজলিশে যোগদান করে না। (সূরা ফুরকান, ৭২নং আয়াতাংশ)। এখানে “ইয়াশ্হাদূন” শব্দটির দু’টি অর্থ হতে পারে। ১. উপস্থিত বা হাজির হওয়া। ২. সাক্ষ্য দেওয়া। প্রথম অর্থ মুরাদ নিলে আয়াতের অর্থ হয়- মিথ্যা বাতিল মজলীশে উপস্থিত না হওয়া। ইবাদুর রহমান বা আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ এরূপ মজলীশে যোগদান করা থেকে বিরত থাকেন।
সর্ববৃহৎ মিথ্যা বাতিল হচ্ছে শিরক ও কুফর। এখানে মিথ্যা বাতিল মজলীশ বলে, মুশরিকদের মেলা, গান-বাজনা, মদ্যপান, নির্লজ্জ নৃত্যগীতের মজলীশ বুঝানো হয়েছে। “ইয়াশ্হাদূন” যদি শাহাদত তথা সাক্ষ্য দেওয়ার অর্থে ব্যবহার হয় তাহলে আয়াতের অর্থ হবে- তারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না। এতদোভয় অর্থের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। সুতরাং উভয় অর্থ উদ্দেশ্য হতে পারে। অর্থাৎ ইবাদুর রাহমান বা আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ অশ্লীল মজলীশে যোগদান ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকেন।
ইবাদুর রাহমানের দশম গুণঃ
وَإِذَا مَرُّوا بِاللَّغْوِ مَرُّوا كِرَامًا
অর্থাৎ- আর যখন তারা অসার ক্রিয়াকর্মের সম্মুখীন হয় তখন মান রক্ষার্থে ভদ্রভাবে চলে যায়। (সূরা ফুরকান, ৭২নং আয়াতাংশ)। অর্থাৎ যদিও তারা ঘটনাক্রমে কখনও বাজে মজলিশের নিকট দিয়ে গমন করে তবে গাম্ভীর্য ও ভদ্রতা সহকারে সেখান থেকে চলে যায়।
মোটকথা, আল্লাহর প্রিয়বান্দাগণ ইচ্ছাকৃত কখনও বাজে মজলীশে যোগদান করেন না। যদিও ঘটনাচক্রে কখনও এমন মজলীশ দিয়ে গমন করেন; তবুও এসব পাপাচার তাদের স্পর্শ করতে পারেনা। বরং তারা ভদ্রতা বজায় রেখে সেখান থেকে চলে যান।
ইবাদুর রাহমানের একাদশ গুণঃ
وَالَّذِينَ إِذَا ذُكِّرُوا بِآيَاتِ رَبِّهِمْ لَمْ يَخِرُّوا عَلَيْهَا صُمًّا وَعُمْيَانًا
অর্থাৎ- “তাদেরকে যখন তাদের পালনকর্তার আয়াতসমূহ বোঝানো হয়, তখন তারা অন্ধ ও বধিরের ন্যায় পতিত হয় না।” (সূরা ফুরকান- ৭৩ আয়াত)। অর্থাৎ তারা বিবেকবান মানুষের ন্যায় আয়াতসমূহ নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করে। এবং তদনুযায়ী আমল করে।
ইবাদুর রাহমানের দ্বাদশ গুণঃ
وَالَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا
অর্থাৎ- “তারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের আমাদের জন্য চোখের শীতলতা স্বরূপ করে দিন এবং আমাদেরকে মুত্তাকীগণের ইমাম করে দিন।” (সূরা ফুরকান- ৭৪ আয়াত)।
অর্থাৎ- ইবাদুর রহমান বা আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ কেবল নিজের সংশোধন ও নেক আমল নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন না, বরং তারা নিজেদের স্ত্রী-সন্তানাদীর সংশোধনের জন্যও চেষ্টা করেন এবং আল্লাহর নিকট তাদের জন্য দোয়া করতে থাকেন।
এ পর্যন্ত ইবাদুর রহমান বা আল্লাহর প্রিয় বান্দগণের গুণাবলীর বর্ণনা শেষ হল। অতঃপর তাদের প্রতিদান সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, অর্থাৎ- উপরোল্লিখিত গুণাবলী যারা হাসিল করবে তাদের জন্য রয়েছে বেহেশ্তের সুউচ্চ বালাখানা। এবং তারা হবে আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্তবান্দা। তারা যে বালাখানায় থাকবে তা এত উচ্চ হবে যে, সাধারণ জান্নাতীগণের কাছে তেমনি দৃষ্টিগোচর হবে, যেমন পৃথিবীবাসীদের কাছে তারকা-নক্ষত্র দৃষ্টিগোচর হয়। তারা এমন সম্মানের অধিকারী হবেন যে, ফেরেশতাগণ তাদের সাক্ষাত মাত্রই সালাম ও মুবারকবাদ জানাবে।
পরম করুণাময় দয়াবান আল্লাহ আমাদের সকলকে ইবাদুর রাহমানের গুণাবলীর অধিকারী হয়ে সফলকাম জীবনের অধিকারী হওয়ার তাওফীক দান করুন।
।।আমীন।।
কোন মন্তব্য নেই