সেদিন মানুষ নিজের সন্তানকে রেখে পালিয়ে যাবে!
সেদিন মানুষ নিজের সন্তানকে রেখে পালিয়ে যাবে!
বর্তমান পরিস্থিতিতে মহামারী করোনাভাইরাস অনেক কিছুই শিক্ষা দিচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ একটি শিক্ষা হল আখেরাতের জীবনের শিক্ষা। কেয়ামতের ময়দানে যখন গর্ভধারিণী মা সন্তানকে বিপদে রেখে পালিয়ে যাবে- একইভাবে সন্তানও মায়ের থেকে নিজেকে লুকিয়ে বেড়াবে সে কঠিন পরিস্থিতি একটু হলেও আমরা বুঝতে পারছি।
আমরা দেখছি, করোনায় আক্রান্ত মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী, আত্মীয়স্বজনদের বিপদের মুখে ফেলে মানুষ কীভাবে নিজেকে লুকিয়ে রাখছে। এমনকি নিজের গর্ভধারিণী মা, জন্মদাতা পিতার লাশও বেওয়ারিশ বলে হাসপাতালে ফেলে যাওয়ার খবর আমরা শুনছি। অথচ এই মা-বাবা, ছেলেমেয়ে, স্বামী-স্ত্রী, আত্মীয়স্বজনদের জন্যই আমরা আখেরাত ভুলে দুনিয়ার পেছনে হন্যে হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছি। তাদের একটু সুখে রাখার জন্য, একটু ভালো রাখার জন্য সুদ, ঘুষ, চুরি, ডাকাতি, দুর্নীতি যাবতীয় অন্যায় হাসি মুখে করে যাচ্ছি। অথচ এর ফলে যে আমরা জাহান্নাম কিনছি সে ভাবনাও মনে জাগে না।
হায়! কেয়ামতের বিভীষিকাময় দিনে কেউ কারও হবে না। সবাই নিজেকে বাঁচাতে ব্যস্ত থাকবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘সেদিন মানুষ নিজের সন্তানকে রেখে পালিয়ে যাবে। তাদের মধ্যে প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর সেদিন এমন বিপদ নেমে আসবে যে- তখন নিজেকে ছাড়া আর কারও দিকে তাকানোর মতো অবস্থা থাকবে না’ (সূরা আবাসা, আয়াত ৩৪-৩৭।)
হাদিস শরিফে আছে, হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন ‘মহানবী (সা.)কে বলতে শুনেছি, কেয়ামতের দিন মানুষ উলঙ্গ হয়ে খতনাহীন অবস্থায় কবর থেকে হাশরের ময়দানে এসে দাঁড়াবে। এ কথা শুনে আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! নারী-পুরুষ সবাই কি উলঙ্গ থাকবে? এমন হলে তো খুবই লজ্জার ব্যাপার। উত্তরে হুজুর (সা.) বললেন, হে আয়েশা! সে দিনের পরিস্থিতি এত ভয়ঙ্কর হবে, কেউ কারও দিকে তাকানোর কথা কল্পনাও করতে পারবে না (বুখারি ও মুসলিম।)
আজ আমরা বেঁচে আছি বলে হায়াতের গুরুত্ব বুঝতে পারছি না। কিন্তু যেদিন আমরা পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিয়ে চলে যাব, সেদিনই হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারব দুনিয়ার সামান্য হায়াতটুকু কতটা দামি ছিল। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে যাবে। আমরা যদি পৃথিবীতে আল্লাহর বিধান না মেনে রং তামাশায় জীবন ব্যয় করে ফেলি আর হঠাৎ একদিন মৃত্যু এসে যায়, তখন আমরা বুঝতে পারব কী ভুলটাই না করে ফেলেছি। জীবনের গুরুত্ব জীবন থাকতেই বুঝতে হবে। সময় থাকতেই সময়েকে কাজে লাগাতে হবে।
পবিত্র কোরআনের সূরা আনআমের ২৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘সে সময়ের অবস্থা যদি তুমি দেখতে- যখন অপরাধীদের জাহান্নামের সামনে দাঁড় করানো হবে; তখন তারা আফসোস আর মনের কষ্টে বলতে থাকবে- হায়! আমরা যদি দুনিয়ায় আবার ফিরে যেতে পারতাম এবং আল্লাহর আয়াতকে মিথ্যা মনে না করতাম এবং ঈমানদারদের দলে শামিল হতে পারতাম, তাহলে আজকের এ ভয়াবহ আজাবের মুখোমুখি হতে হতো না।’ এমন আফসোসের জবাবে আল্লাহ বলবেন, ‘তোমাদের আর দুনিয়ায় পাঠানো হবে না (সূরা আনআম, আয়াত ২৮।)
হে আমার ভাই! একবার এই সুন্দর পৃথিবী থেকে চলে গেলে দ্বিতীয়বার আর কখনও ফিরে আসা সম্ভব হবে না। তাই তো রাসূল (সা.) বলেছেন, মৃত্যু আসার আগে জীবনকে গণিমত মনে করো। আজকের এই করোনাভাইরাস আমাদের শিখিয়ে দিচ্ছে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত আপনজন আর কেউই নয়। আসুন! সে আল্লাহতে আমরা সমর্পিত হই। তার দেখানো পথে জীবন পরিচালনা করি। তার রঙে রঙিন হই। তাহলে আশা করা যায়, কেয়ামতের কঠিন দিনে প্রভুর রহমতের কোলে জায়গা করে নিতে পারব। হে আল্লাহ! কেয়ামতের দিন আপনার কোলে আশ্রয় চাই। মহামারী করোনাভাইরাস থেকে আপনার কাছে নাজাত চাই।
কোন মন্তব্য নেই