ইসলাম পালনে গরিমশি করা!!
অনেকে ভালো হতে দেরি করে। তারা এভাবে বলে- আমি সিরিয়াসলি নামাজ পড়া শুরু করবো, এইতো কিছু দিনের মধ্যেই। আরো কিছুদিন পর। এখন কিছুটা মজা করে নিই। এরপর আমি পুরোপুরি ভালো হয়ে যাবো। কিন্তু তারা এভাবে শুধু দেরি করে আর দেরি করে, কোনোদিন আর ভাল হয় না।
কিয়ামতের দিন এদের এবং ঈমানদারদের মাঝখানে একটি ওয়াল পড়ে যাবে। আল্লাহ বলেন-
"সেদিন মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারীগণ ঈমানদারদের বলবে, ‘তোমরা আমাদের জন্য অপেক্ষা কর, তোমাদের নূর থেকে আমরা একটু নিয়ে নেই’, বলা হবে, ‘তোমরা তোমাদের পিছনে ফিরে যাও এবং নূরের সন্ধান কর,’ তারপর তাদের মাঝখানে একটি প্রাচীর স্থাপন করে দেয়া হবে, যাতে একটি দরজা থাকবে। তার ভিতরভাগে থাকবে রহমত এবং তার বহির্ভাগে থাকবে আযাব।"
তারা তখন মুমিনদের বলবে- "আমরা কি তোমাদের সাথে ছিলাম না?"
মুমিনরা তখন জবাব দিবে-
"‘হ্যাঁ, কিন্তু তোমরা নিজেরাই নিজেদেরকে বিপদগ্রস্ত করেছ। আর তোমরা অপেক্ষা করেছিলে এবং সন্দেহ পোষণ করেছিলে এবং মিথ্যা আশা তোমাদেরকে প্রতারিত করেছিল, অবশেষে আল্লাহর নির্দেশ এসে গেল। আর মহা প্রতারক তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত করেছিল।"
এখানে মিথ্যা আশা বলতে আসলে কী বুঝানো হচ্ছে? আপনি মাঝে মধ্যে কিছু দুআ আর নামাজ পড়ে ভাবতেন এটাই যথেষ্ট। ভাবছিলেন- জাস্ট সোজা হেঁটে জান্নাতে ঢুকে যাবেন। মহা প্রতারক শয়তান আপনাকে প্রতারিত করেছিল।
আজকেই সিদ্ধান্ত নিন। পরিপূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ করুন। গড়িমশি করা বন্ধ করুন। কার মৃত্যু কখন এসে যায় কেউ জানে না। আল্লাহ প্রত্যেকের মৃত্যুর জন্য একজন করে ফেরেশতা নির্ধারণ করে রেখেছেন। উনি নির্দেশ পাওয়া মাত্র জান কবজ করে নিবেন। একটুও দেরি করবেন না।
পরকালের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য এটাই একমাত্র জীবন। এছাড়া আর কোনো জীবন নেই। প্রত্যেককে এই একটি চান্স-ই দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় বারের কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। কারো জন্যই না।
কিয়ামতের দিন শাস্তি দেখার পর এরা নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে নিবে। এরপর বলবে, সব অপরাধ আমার। যদি আমাকে আরেকবার সুযোগ দান করেন, তাহলে আমি মুহসিনদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো। (لَوۡ اَنَّ لِیۡ کَرَّۃً فَاَکُوۡنَ مِنَ الۡمُحۡسِنِیۡنَ - আমাকে যদি একবার ফিরে যাবার সুযোগ দেয়া হত, তাহলে আমি মুহসিনদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। যুমার-৫৮)
ঈমানের কয়েকটি পর্যায় রয়েছে। মুহসিন হলো সর্বোচ্চ পর্যায়। মুহসিন হলো আপনি এমনভাবে ইবাদাত করেন যেন আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছেন। তারা সেদিন বলবে, আমরা শুধু মুসলিম বা মুমিন হবো না, আমরা একেবারে সর্বোচ্চ পর্যায়ের মুহ্সিনদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো। যদি আর একবার সুযোগ দেওয়া হয়।
আল্লাহ তখন বলবেন, "না, বরং তোমার কাছে আমার আয়াত এসেছিল, তখন তুমি সেগুলোকে মিথ্যে বলে অস্বীকার করেছিলে, অহংকার করেছিলে আর কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে।" (যুমার-৫৯)
এখানে একবচনে বলা হয়েছে 'আমার নির্দেশ তোমার কাছে এসেছিলো।' এর মানে হলো- আমি সপ্তম আকাশ থেকে এই কুরআন পাঠিয়েছি। হাজার হাজার ফেরেশতারা কুরআন নিয়ে এসেছিলো শেষ নবীর নিকট। (কুরআনের অনেক সূরা নাজিলের সময় জিব্রাইল (আ) এর সাথে হাজার হাজার ফেরেশতার আগমন ঘটতো।) যিনি রক্তাক্ত হয়েছিলেন যেন আমি আপনি কুরআন তিলাওয়াত করতে পারি। কত শত মানুষ শহীদ হয়েছেন যেন একদিন আমরা কুরআন পাঠ করতে পারি। কত মানুষ জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছেন যেন একদিন আমি আপনি 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' বলতে পারি।
কত চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আমার আয়াতগুলো তোমার কাছে এসেছিলো। 'ফাকাজ্জাবতা' তুমি সেগুলোকে মিথ্যে বলে অস্বীকার করেছিলে। 'ওয়াসতাকবারতা' এবং অহংকার করেছিলে। 'ওয়া কুন্তা মিনাল কাফিরীন' তুমি সবসময় কাফিরই ছিলে। আজ তুমি যত খুশি কাঁদতে পারো। কোনো লাভ হবে না।
- নোমান আলী খানের আলোচনা অবলম্বনে
- Hope in Surah Az-Zumar - Nouman Ali Khan (Nov 2014)
কোন মন্তব্য নেই